বিদেশী ‘লুবনা’ প্রজাতির আম সোনাগাজীতে
লুবনা প্রজাতির বারোমাসি আম বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। তবে ফেনীর সোনাগাজীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান প্রমাণ করেছেন সঠিক পরিচর্যা নিলে বিদেশী আম সোনাগাজীর মাটিতে ফলানো সম্ভব।
সোনাগাজী সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে মুহুরী প্রজেক্টের পাশে এগ্রো কমপ্লেক্স নামে সমন্বিত খামারটি গড়ে তোলেন সোলায়মান। ৭০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ কমপ্লেক্সের পাঁচ একরজুড়েই রয়েছে সারি সারি আম গাছ। কমপ্লেক্সের ভেতর ছোট-বড় ৯৬টি পুকুরের পাড়জুড়ে লাগানো প্রায় তিন হাজার আমগাছের মুকুল দেখলে যে কারো মনে ধরবে। এছাড়া রয়েছে কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারকেল, ড্রাগন ফল, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, গাজর, চেরি, টমেটো ও জামরুলের অসংখ্য গাছ।
কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান জানান, ১৯৯২ সালে সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রকল্পসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৭০ একর জমিতে মাছ চাষ ও গবাদিপশু পালনের পাশাপাশি কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত উপায়ে ফলের বাগান করেন তিনি।
তিনি জানান, কমপ্লেক্সে দেশী-বিদেশী প্রায় ৪১ জাতের আম গাছ আছে। এর মধ্যে লুবনা জাতের আম গাছ থেকে বছরে ৭ হাজার ৫০০ কেজি আম উত্পাদন হয়। অন্যান্য প্রজাতির গাছ থেকেও তিনি বছরে অন্তত ১০ হাজার কেজি আম বিক্রি করতে পারেন। এতে শুধু আম বিক্রি করেই বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা তার আয় হয় বলে জানান তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত এ সেনাবাহিনী কর্মকর্তা জানান, খামারে অন্যসব আম গাছের পাশাপাশি প্রায় ২০০ মালয়েশিয়ান লুবনা আমের গাছ আছে। এরই মধ্যে খামারের বারোমাসি লুবনা প্রজাতির আমগুলো পাকতে শুরু করেছে ও মার্চের
প্রথম সপ্তাহেই বেশির ভাগ গাছের আম সংগ্রহ করা যাবে।
তিনি আরো জানান, লুবনা বেশ সুস্বাদু ও
সামান্য আঁশযুক্ত আম। পরিপূর্ণ যত্ন পেলে একটি লুবনা আম ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয় এবং একেকটি মাঝারি চারা গাছ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত আম পাওয়া যায়।
সোলায়মান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ সাধারণত বিদেশী প্রজাতির আমের চাষ করেন না। অথচ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এসব জাতের আম এখানেও ভালো ফলবে। তার প্রমাণ আমার এ বাগান।
তিনি আরো বলেন, আমান বাগানের আমে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। মুকুল আসার দুই মাস আগে একবার মাত্র কীটনাশক দেয়া হয়, যাতে আমে পোকা না ধরে। এছাড়া আম গাছের গোড়ায় ইউরিয়া সার ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) সোলায়মান দক্ষ আমচাষী। সাধারণত যেসব জাতের আম এ অঞ্চলে চাষাবাদ করা কষ্টকর, তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সেসব জাতের আমের চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন নিয়মিত বাগানের খোঁজখবর নেন। চলতি মৌসুমে তার বাগান থেকে প্রায় ২০ টন আম উত্পাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
Comments
- No comments found
Leave your comments