নতুন জাতের অমৌসুমি আম উদ্ভাবন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের লাখ লাখ আমগাছে এখন মুকুলের সমারোহ। ব্যতিক্রম শুধু আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) কয়েকটি গাছ। এখানে কয়েকটি গাছে ডাঁসা ডাঁসা আম। একটি গাছে আছে পাকা আমও।
এর আগে ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু আম পেকেছিল। আর এখনকার ডাঁসা আমগুলো পাকবে মধ্য মার্চে। গাছগুলোর এ বৈশিষ্ট্য স্থায়ী হলে দেশে আম উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে অমৌসুমের আম নিয়ে গবেষণা পরিচালনাকারী আম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জমির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা গাছের সায়ন (কলম করার উপযোগী কচি ডগা) থেকে চারা উৎপাদন করে গবেষণা কেন্দ্রে লাগানো হয় ২০০২ সালে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছে মে মাসে মুকুল ধরে। ওই গাছের আম পাকে সেপ্টেম্বর মাসে। কয়েক বছর ধরে এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তিনি ওই গাছের সায়ন নিয়ে কয়েকটি চারা কলম লাগান ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসজুড়ে ওই গাছগুলোতে তিন দফায় মুকুল ধরতে দেখা যায়। অন্যদিকে আগের মাতৃগাছে সেপ্টেম্বরে আম পেড়ে নেওয়ার পর এক মাস পরেই আবারও মুকুল ধরে অক্টোবরে।
জমির উদ্দীন বলেন, সাধারণত দেখা যায়, যে গাছের সায়ন নিয়ে চারা কলম করে গাছ হয়, সেই গাছ মাতৃগাছের গুণাগুণ বহন করে। কিন্তু তিন বছর বয়সী দুটি গাছে মুকুল ধরল আগস্ট মাসে তিনবারে। এ দুটি গাছের কিছু আম পেকেছে গত ৬, ৮ ও ২৪ ডিসেম্বর এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি। এখনো গাছে আছে দুটি পাকা আম। ধারণা করা হচ্ছে, বাকি আম পাকবে মধ্য মার্চের দিকে। অন্যদিকে মাতৃগাছের আম পাকবে মার্চের শেষের দিকে।
ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে আমের বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও। মাতৃগাছের আম টক ও আঁশযুক্ত। কিন্তু নতুন গাছের আম সুস্বাদু, দেখতেও আকর্ষণীয়। গাছেই হলুদাভ রং ধারণ করে। মিষ্টতা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। খাদ্যাংশ ৭৮ শতাংশ। এ আমের অন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি তেমন রসাল নয়। দানা দানা ভাব আছে, যা বিদেশিদের কাছে পছন্দনীয়।
আম বিজ্ঞানী জমির উদ্দীন বলেন, জিনগত পরিবর্তনের কারণেই মাতৃগাছের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নতুন গাছের বৈশিষ্ট্যের মিল না হয়ে পরিবর্তন দেখা দেয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় একে ‘মিউটেশন’ বলা হয়ে থাকে। এটা বিস্ময়কর ঘটনা।
আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হামিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত জাতের মিষ্টি আমের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নতুন এ আমের তুলনা করা যায়। এ আমের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ আম অমৌসুমি, যা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এ বৈশিষ্ট্য স্থায়ী হলে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আরও বছর দুয়েক গবেষণার পর এটা চাষি পর্যায়ে ছড়ানো হবে।
Comments
- No comments found
Leave your comments