জমে উঠেছে আমের নগরী রাজশাহী
রোজার শুরু থেকেই জমে উঠেছে আমের নগরী রাজশাহী। সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যেখানেই তাকানো যায়, চারদিকেই চোখে পড়ছে শুধু আম আর আম। ইফতারিতে এ আম যোগ করছে বাড়তি স্বাদ। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এবার আমের কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। এ বাজারের আশপাশের সড়কগুলোতে এখন শুধুই চোখে পড়ছে আমভর্তি ভ্যান। বাগানের কাঁচা-পাকা আম নিয়ে সব ভ্যানের গন্তব্য বানেশ্বর বাজার। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে উঠেছে নানা জাতের আম। খোলা আকাশের নিচে ভ্যানের ওপর সাজিয়ে আম বিক্রি করছেন প্রায় চার শতাধিক ব্যবসায়ী। সপ্তাহের সাত দিনই এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজারটি। বানেশ্বর বাজারের আশপাশে রয়েছে অন্তত ৫০টি আমের আড়ৎ।
মুনতাসির (৪৫) নামে এক আড়ৎদার জানান, এখন আড়তে যেসব আম আছে, তার সবই গাছপাকা। কিন্তু দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য একটু শক্ত থাকতেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে। এবার ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। তবে উৎপাদনে কমতি নেই বলেও জানান তিনি বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী সেলিম রেজা (৪০) বলেন, রমজানের কারণে দেশের সব জায়গায় এখন আমের ব্যাপক চাহিদা। তাই হাটে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই আম শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহীর অনেক মানুষও আম কিনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
সরেজমিন নগরী ঘুরে দেখা গেছে প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে আম বাজারের চিত্র। নগরীর সাহেব বাজার, শালবাগান, রেলগেট, বিনোদপুর, কাজলা, বিনোদপুর, লক্ষীপুর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ক্রেতা আর বিক্রেতার দর কষাকষির চিত্রও চোখে পড়ার মতো। তবে দাম যাই হোক সারাদিনের রোজার পর পরিবারের জন্য আম কিনতেই হবে হয় অল্প না হয় বেশি।
নগরীর শালবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতারা ব্যস্ত আম সাজাতে দম ফেলার কোন সময় নেই কারো। সামনেই টুকরিতে সাজানো রয়েছে হরেক রকমের আম ক্রেতারা বেছে বেছে নিচ্ছেন তাদের মতো করে। এবার রমজানের পর থেকেই বেড়েছে আমের চাহিদা। দামও বেড়েছে রমজানের পর থেকেই। গোপালভোগ রমজানের আগে ছিলো এক হাজার ৮শ থেকে দুই হাজার টাকা। বর্তমানের রমজানের পর থেকেই সেই আমের দাম দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২শ থেকে আড়াই হাজার টাকা।
নগরীর সাহেব বাজারে গিয়ে দেখা গেল, জিরো পয়েন্ট থেকে মণিচত্বর পর্যন্ত আমের কেনা-বিক্রি চলছে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, এবার কাল বৈশাখী ঝড়ে আমের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তারপরও কৃষকদের গাছে মোটামুটি ভাবে আম টিকে রয়েছিল। আর সেই আম এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
সাহেব বাজরের আম বিক্রেতা জলিল উদ্দিন অমৃতবাজার পত্রিকাকে জানান, গোপাল ভোগ ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু রোজার আগেই এই আম বাজারে ছিলো ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। বাজারে আম কিনতে আসা নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আলি আকবর বলছিলেন, এবার আমের দাম একটু বেশি। কিন্তু তারপরেও ইফতারিতে আমের যেন জুড়ি নেই। তাই বাজারে এলেই আমের তালিকা থাকছেই।
আম ক্রেতা সুমন বলছিলেন, ইফতারিতে আম না থাকলে কি যেন নেই মনে হচ্ছে। আম বাড়তি স্বাদ নিয়ে আসছে ইফতারিতে। নগরীর অলিগলিতে ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে আম। ক্রেতারা যেন ঘরে বসেই আম কিনতে পারেন, এর জন্য ভ্যানে করে বিক্রেতারা আম নিয়ে ছুটছেন। বিক্রিও হচ্ছে বেশ জানালেন বিক্রেতা হুসেইন আলী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, জেলায় আমের বাগান রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার আম এসেছে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৮০ গাছে। এসব গাছ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন।
এবার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও আমচাষিদের সমন্বয়ে আম নামানোর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ১৫ মে থেকে গোপালভোগ ও গুটি, ২৫ মে থেকে হিমসাগর ও লখনা জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। আগামী ৮ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১০ জুন থেকে ফজলি, ২০ জুন থেকে আমরোপালি এবং ১৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম নামাতে পারবেন চাষিরা।
গত বছর থেকে রাজশাহীর আম বিদেশেও রফতানি শুরু হয়েছে। ওই বছর মাত্র ৩০ মেট্রিকটন আম রফতানি করা হয়েছিল। তবে এবার চীন ও ইউরোপে ১শ মেট্রিকটন আম টার্গেট নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। উন্নতমানের আম রফতানি করতে বেশকিছু বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি।
Comments
- No comments found
Leave your comments