সাতক্ষীরার সাড়ে ১৪ হাজার হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি গাছ
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির বিষমুক্ত আম বিদেশে রফতানির জন্য এবার জেলার চার উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৫১টি হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি গাছ বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিদেশে আমের চাহিদা বাড়ায় মৌসুমের শুরুতেই সুন্দর পরিষ্কার দেখে গাছ বাছাই করে তার পরিচর্যা শুরু করা হয়। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত ৬শ’ মেট্রিক টন আমের মধ্য থেকে বাছাই করে ২শ’ মেট্রিক টন বিদেশে রফতানি করা যাবে বলে মনে করে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় আমের আবাদ হয়েছে মোট ৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি। আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। যা গতবছরের তুলনায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি।
সূত্র আরো জানায়, গত বছর সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২৩ টন হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি আম যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি হলেও এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২শ’ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এ বছর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে যাচাই করে সুন্দর পরিষ্কার দেখে সদর উপজেলার ১৫০টি, কলারোয়া উপজেলার ১শ’টি, দেবহাটায় ৪০টি ও তালা উপজেলায় ৮৭টিসহ মোট ১০০ হেক্টর জমির ৩৭৭টি আম বাগানের ২২০ জন মালিকের ১৪ হাজার ৪৫১টি হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি আম গাছ বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের জন্য। আর এসব আম গাছ বিষমুক্ত রাখতে চাষিদের অধিকতর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এসব বাগান থেকে চলতি মৌসুমে ৬০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা থেকে বাছাই করে ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করা যাবে। এজন্য এ বছর কোয়ারেন্টাইনের এক্সপোর্ট ডিডি, বাংলাদেশ ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম এন্টারপ্রাইজ ও দীপ ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তাবৃন্দসহ হার্টেক্স ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি দলের সাথে সম্প্রতি সাতক্ষীরার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করেছেন এফএও ফুড সেল প্রোগ্রাম অফিসার বিদেশি নগরিক মাইক ডিলন।
দেশে বর্তমানে আমের নাম বলতেই আগে আসে সাতক্ষীরার নাম। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সাতক্ষীরার উৎপাদিত আম অনেক সুস্বাদু হওয়ায় এবং অন্যসব জেলার আগে এ জেলার আম পাকায় এর কদর এবং চাহিদা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও বেড়েছে। সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে হিমসাগর, ন্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, সিদুর রাঙ্গা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাইলতা আম বেশি চাষ করা হয়। হিমসাগর আর ন্যাংড়া আমের রাজধানী সাতক্ষীরার মানুষ বহুকাল ধরেই আম চাষে জড়িত। সাতক্ষীরার আম বিদেশে চাহিদা বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার বেশী ব্যবসায়ীরা আসছেন। আম ব্যবসায়ীরা জানান, মুকুলের ওপর ভিত্তি করেই বাগান কেনাবেচা হয়ে থাকে। এজন্য আমগাছ পরিচর্যার সাথে সাথে মুকুল রক্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষিরা। এবার আমের মুকুল বেশি হওয়ায় বাগানের দামও বেশি। তবে যে সব বাগানকে বিদেশে রফতানির জন্য বাছাই করা হয়েছে সে সব বাগান কৃষি বিভাগ সব সময় দেখাশুনা করছেন ও চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশের জন্য আম একটি মৌসুমি ফল হলেও সাতক্ষীরা জেলায় বর্তমানে এটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আম চাষিদের দাবি, সরকার যদি আম পাড়া বা সংরক্ষণের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের আমে দাগ হবে না। ডিমের খাচিরমত বিশেষ কায়দায় আম বাজারজাত করা গেলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে বিদেশেও এর চাহিদা আরো বাড়বে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, চলতি মৌসুম আমের মুকুলের জন্য অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। জেলার প্রতিটি বাগানে গাছে পর্যাপ্ত মুকুল হয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দেয় তাহলে সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। আম গাছ বিষমুক্ত রাখতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমের ফলন বৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছে কৃষি অফিস।
Comments
- No comments found
Leave your comments