হাত দিলেই হিমসাগর!
বাজারে গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই আম আম রব। ক্রেতা যে আমেই হাত দিক না কেন দোকানি বলবে হিমসাগর নয়তো রাজশাহীর আম। ক্রেতা সতর্ক না বলে রঙে রূপে একই হওয়ায় দিব্যি গুটি আম চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে হিমসাগরের নামে। অনেকসময় খুচরা বিক্রেতা নিজেই জানে না তিনি কোন আম বিক্রি করছেন।
রাজধানীর ফলের দোকানে এখন নানা পদের আম। আকার আকৃতি স্বাদে বর্ণে গন্ধে একেকটি আমের একেক বৈশিষ্ট্য। কোনওটি দেখতে যেমনই হোক পাকা চোখে ঠিকই ধরা পড়বে ভিন্নতা। ফলের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেলো জাতের আমের বাইরে গুটি আমের ছড়াছড়ি এবং ক্রেতারা সেটাই কিনছে দেদারসে। শ্যাওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের আটটি ফলের দোকানে সাজানো আমের মধ্যে এখন হিমসাগর, ল্যাংড়া, আমরুপালি, আর কিছু কলামের আম।
আমাদের দেশের জনপ্রিয় জাতের আমগুলোর কিন্তু সুন্দর নাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ল্যাংড়া, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, ক্ষীরপুলি, শাহী-পছন্দ, রাজভোগ, মির্জাপুরী, কিষাণভোগ, ফজলি, চসা, আশ্বিনা, খিরসাপাতি, হিমসাগর, অমৃতভোগ, রানী পছন্দ, কৃষ্ণভোগ, দিল পছন্দ, বোম্বাই (মালদা), সূর্যপুরী, মিসরীভোগ, শ্রীধন, গোলাপ খাস, বৃন্দাবনী, দিল খোশ, হাড়ি ভাংগা। এরমধ্যে গোপালভোগ, মোহনভোগ, রানীপছন্দ, হিমসাগর, সুরমা, ফজলী আমই বেশি বাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয়। এ ছাড়া আবাদ করা হচ্ছে তেমন অন্য জাতগুলো হল আশ্বিনা, বারমাসী ও কাঁচা মিঠা।
বাজারে পাওয়া আমগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় জাত ল্যাংড়া। সুগন্ধী, সুমিষ্ট, আঁশহীন, পাতলা চামড়া। কিন্তু একটু এদিক সেদিক হলে ভুল ল্যঙড়া ব্যাগে নিলে সেটা পেকে পচে গেলেও মিষ্টি হবে না। বাজারে সবার আগে আসে গোপালভোগ। হিমসাগরও আরেকটি উৎকৃষ্ট জাত। এরা রসাল, মিষ্টি ও আঁশবিহীন। ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় ফরমালিনমুক্ত আমের যে দোকান দেওয়া হয়েছে সেখানেই হিমসাগরের নামে আঁশযুক্ত গুটি আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। চাপাইনবাবগঞ্জের বিনোদপুরে আম ব্যবসায়ী রহিম বাদশা বলেন, আমরা আমের নামে কোনও গোলমাল করি না। কানসাট আমের আড়ত থেকে যেসব আম ঢাকায় যায় সেসব জায়গায় জাতের আমের বাইরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে কিছু জাতের বাইরের আম আর জাতের আম মিশ্রণ করার অভিযোগ আছে। তিনি বলেন, আমের ফলন এবার খারাপ না। দাম দ্রুত পড়ে গেছে। সে কারণে লাভ করার জন্য এ ধরনের কাজ ব্যবসায়ীরা করে থাকতে পারে।
এদিকে বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী খালেদ আহমেদ বলেন, আমরা চারঘাট, বাঘা এলাকার কিছু আম বিক্রি করি ঠিক। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে যারা পাইকারি কিনতে আসে তাদের কাছে কিছুই লুকানো হয় না। তারা জেনে বুঝে সেই দামেই নিয়ে যান এবং ঢাকায় গিয়ে গুটি আমের জাতকে হিমসাগর বলে চালিয়ে দেয়। প্রতি কেজিতে একটা দুইটা দিয়ে আম বিক্রি করে।
এদিকে মুখে সব আমকেই রাজশাহীর আম বললেও ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরার আমে বাজার সয়লাব। এ এলাকার আমের চাহিদা কম হওয়ায় পাইকাররা কম দামে আম ঢাকায় নিয়ে এসে রাজশাহীর আম বলে চড়া দামে বিক্রি করে। শান্তিনগরের আম বিক্রেতা রাজিব রাজশাহীর আম বলে হিমসাগর গছিয়ে দিতে গেলে দেখা যায় আমগুলো সাইজে বেশ ছোট এবং মুখের দিক ছুঁচালো। পরে তিনি স্বীকার করেন আমগুলো সাতক্ষীরা থেকে কেনা।
মৌসুমের শুরুতেই বাজারে যেসব আম আসে সেসব জাত হল গোপালভোগ, মহানন্দা, খিরসা পাতি, কোহিতুর, বৃন্দাবনী, মিঠুয়া। এগুলোকে স্থানীয়ভাবে আশু জাত বলা হয়। মাঝারি মৌসুমের জাতগুলো হল কিষাণভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, বোম্বাই, মোহনভোগ, মিসরীভোগ। এগুলো জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পাকে। আমের মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসে ফজলি, আমরুপালি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, শ্রীধন।
আমরুপালি জাতটি দিন দিন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি ভারতের একটি জনপ্রিয় জাত। ভারতের বিহার এবং উত্তর প্রদেশ থেকে এটি বাংলাদেশে এসেছে। ছোট খাটো আমরুপালি গাছে লম্বা বোঁটায় ঝুলে থাকে অনেকগুলো আম।
কী খেয়াল রাখবেন
নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় বলা হলেও কার্বাইড বা ফরমালিনমুক্ত আম পাওয়া ঢাকার বাজারে কঠিন। আম কিনতে গেলে প্রথমে লক্ষ্য করুন মাছি বসছে কিনা বা আমের চামড়া টান টান হয়ে আছে কিনা। আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছপাকা আম হলে আমের গায়ে সাদাটে ভাব থাকে। এ দাগকে অনেকে পাকানোর ওষুধ ভেবে ভুল করে। ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে ডোবানে আম হবে ঝকঝকে সুন্দর। বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ আছে এক্ষেত্রে। আবার কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম, দাগহীন। বেশি ওষুধ না দিলে আমের গায়ে স্বাভাবিকভাবে একধরনের দাগ থাকে। আম নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে কিনুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে।
Comments
- No comments found
Leave your comments