হারিয়ে যাচ্ছে গোপালভোগ!
জামাইষষ্ঠীতে ঝোড়ো ইনিংস খেলল মালদার গোপালভোগ। জামাইরা বুধবার চেটেপুটে স্বাদ নিলেন ঐতিহ্যবাহী আমটির। আজও সমান অটুট তার গরিমা। এবার বিদায়ের হাতছানি। দু’–চারদিনের মধ্যেই টা–টা জানাবে সে। এখন হাতে সময় একেবারেই নেই বললেই চলে। আম–রসিকরা এখনও যাঁরা গোপালভোগের স্বাদ নেননি, অবিলম্বে বাজার থেকে নিয়ে যান প্রিয় আমটি। জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের উপ–অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী জানান, জেলায় মোট উৎপাদনের শতকরা ৫ ভাগ গোপালভোগ। আমের মরশুমটা শুরু হয় গোপালভোগ দিয়ে। যেহেতু উৎপাদন কম, খুব তাড়াতাড়ি শেষও হয়ে যায় আমটি। সাধারণত জামাইষষ্ঠীর সপ্তাহখানেক আগে থেকে আম পাড়া শুরু হয়। ষষ্ঠীর পর ৫–৬ দিনের মধ্যে বিদায় নিয়ে থাকে গোপালভোগ। এখন হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন। গোপালভোগ জেলাবাসীর সবচেয়ে প্রিয়। তাহলে উৎপাদন এত কম কেন? স্বাদে, গন্ধে এত জনপ্রিয়তার পরেও চাষীরা উৎসাহ দেখাচ্ছেন না কেন? কেনই–বা আমের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবা হচ্ছে না? তাহলে কি কিছুদিন পর ইতিহাসের পাতায় দেখা যাবে জনপ্রিয় আমটি? চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই আমের ফলনটা অন্যান্য আমের থেকে তুলনামূলক কম। গাছ মাঝেমধ্যেই বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে। অন্যান্য গাছে যেখানে দেদার মুকুল, তখন হয়ত গোপালভোগের গাছে মুকুলের দেখা নেই। এ ছাড়া আম হলেও গাছেই নষ্ট হয়ে যায় বেশ কিছু। চাষীরা এই গাছকে বাগে আনতে একরকম ব্যর্থ। অনেকে সেজন্যই গোপালভোগকে প্রতারক বলে থাকে। জেলায় যে অল্পসংখ্যক গাছ আছে, চাষীরা সেই গাছের আম নিজেদের খাওয়ার জন্যই রাখে বেশিরভাগ। কিছু আম বাজারে আসে। দামও আকাশছোঁয়া। বুধবারও বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৫০ টাকার ওপর। এখন যা সমস্যা তাতে কি গোপালভোগ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে! চাষীরা জানাচ্ছেন, যে–সব গাছ আছে সেগুলি অনেক পুরনো। বেশি বয়সের। নতুন করে আর কেউ গাছ লাগাতে চাইছেন না। আবার পুরনো বলে স্বাভাবিকভাবে ফলনও কম। পাশাপাশি চাষীদের এখন চাহিদা হিমসাগর, আম্রপালি, লক্ষ্মণভোগের দিকে। বেশি বেশি ফলন, তাই। চাষীরা বেশি লাভ করে থাকেন এই সব আমে। স্বাভাবিকভাবেই চাষীদের কাছে চাহিদাও বেশি। যদিও এখনও দিন পনেরো লাগবে আম্রপালি বাজারে আসতে। তার পর লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর। কিন্তু কিছু ভিনজেলার আম মালদার আম্রপালি, লক্ষ্মণভোগ বলে চালানো হচ্ছে বাজারে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চক্করে পড়ে ঠকছেন জেলার সাধারণ মানুষ। ভুল আমের স্বাদ নিয়ে ফেলছেন তাঁরা। সচেতন হওয়া উচিত তাঁদের।
Comments
- No comments found
Leave your comments