‘লখনা’ ও ‘আটি’ দিয়ে শুরু রাজশাহীর আম বাজার
‘লখনা’ ও ‘আটি’ জাত দিয়ে শুরু হয়েছে এ মৌসুমের আম বাজার। তবে ‘আমের রাজা’ ল্যাংড়া, খিরসাপাত (হিমসাগর) ও গোপালভোগ কিনতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী জানান, আটি আমের পাইকারি কেনাবেচা হচ্ছে ১১০০ টাকা মণ দরে। অথচ গত বছর মৌসুমের শুরুতে আটি আম বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা মণ। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে এবার প্রতিকেজি আটি আমের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।
তার দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী দাম বেশি পাওয়ার আশায় লখনা জাতের অপরিপক্ব আম বাগান থেকে ভেঙে (পেড়ে) বাজারে আনছেন। বানেশ্বর হাটে লখনা জাতের আম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বাজারে আম চলে আসায় ব্যস্ততা বেড়েছে ফল ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের। মৌসুমি আম ব্যবসায়ীরা ঘর ভাড়া নিয়ে অপেক্ষা করছেন আমের জন্য।
নগরীর গুড়পট্টি এলাকার আম ব্যবসায়ী এনতাজ আলী জানান, ১০-১২ দিনের মধ্যে বাজারে আমের রাজা ‘ল্যাংড়া’ চলে আসবে। তবে গতবারের তুলনায় এবার আমের ফলন কম হওয়ায় ব্যবসাও কম হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
সাহেববাজার এলাকার আরেক আম ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান (৭০) জানান, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ থেকে আমের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি বলেন, জুন মাসের পুরো সময় ধরেই চলবে আমের রমরমা ব্যবসা।
নগরীর রায়পাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী ফরমান আলী জানান, গত বছর যে বাগানে তিনি দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন, সে বাগান থেকে এবার ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। বাগানের অনেক গাছে এবার মুকুল আসেনি। আর যে সব গাছে মুকুল এসেছিল, সেসবের ওপর দিয়েও নানা ঝড়-ঝাপটা যাচ্ছে। আর টানা খরায় গোটা গোটা আম ঝরে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের মতো এবারও আমের ফলন ভালো হবে না। মৌসুমের শুরুতে এবার রাজশাহীর অনেক গাছেই কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসেনি। প্রাকৃতিক নিয়মে এক বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর ফলন হয় কম। গত বছর আমের ফলন হওয়ায় এ বছর আমের জন্য ‘অফ ইয়ার’।
গত বছর কৃষি বিভাগ ৮ হাজার ৯৮৬ হেক্টর আমবাগানে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অর্জন হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুন। গত বছর ১৪ হাজার ৫ হেক্টর আমবাগানে আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজশাহী জেলায় ১৪ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে বর্তমানে আম গাছ রয়েছে ১৪ লাখ ২১ হাজার ৫০৩টি।
রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, বৈশাখ থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের এ পর্যন্ত রাজশাহীতে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। তাই অনেক বাগানে গুটি আম ঝরে গেছে। তবে পরামর্শ অনুযায়ী অনেক বাগান মালিক গাছে সেচ দিয়েছেন। তারা ভালো ফলন পাবেন।
Comments
- No comments found
Leave your comments