হাফছড়ি এলাকায় ১৫ একর টিলা ভূমিতে আম বাগান
এক সময়ে বনজঙ্গলে পরিপূর্ণ অনাবাদি পাহাড়ি টিলায় এখন সারি সারি আম বাগান। আম্রপালি, রুপালি,মল্লিকা, লেংরা, গোপালভোগ, মোহনভোগ প্রভৃতি জাতের থোকায় থোকায় আম দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে আম গাছের ডালপালা। চারিদিকে আমের মুহুর্মুহু সুগন্ধি। রামগড়ের বড়পিলাকে আসাদ গাজীর আম বাগানের এমনই নজরকাড়া দৃশ্য। এ সফল চাষী আসাদ গাজী এবার পাহাড়ে আম বিপ্লব ঘটিয়েছেন। রাজশাহী কিংবা চাপাইনবাবগঞ্জের মত এ পার্বত্য এলাকাকেও আমের জন্য বিখ্যাত করতে চান তিনি। বাণিজ্যিকভিত্তিক পরিকল্পিত আম চাষ করে বৃক্ষপ্রেমী আসাদ গাজী পাহাড়ে উন্নত জাতের আম উৎপাদনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। আজ আম বাগান করে তিনি শুধু রামগড়ে নয়, গোটা খাগড়াছড়ি জেলায় এখন পরিচিত। সরকারি কোন সাহায্য সহায়তায় নয়, নিজের কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় পাহাড়ের অনাবাদি টিলায় উন্নত জাতের আম চাষে তিনি ঈর্ষণীয়
সফলতা অর্জন করেছেন। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় তাঁর বাগানের আমের কদর সবার কাছেই বেশি। তাই পার্বত্য এলাকার সীমানা পেরিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সমতল জেলাতেও সরবরাহ হচ্ছে আসাদ গাজীর বাগানের আম। রামগড় উপজেলা সদর হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হাফছড়ি ইউনিয়নের বড়পিলাক এলাকায় ১৫একর টিলা ভূমিতে তিনি আম বাগান গড়ে তোলেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে দুই- আড়াই হাজারটি ফলন্ত আম গাছ আছে। আম বাগানের মাঝেই তাঁর বসতবাড়ি। আম্রপালি,রুপালি,মল্লিকা,রাজাপুরি,কালুয়া, মোহনভোগ,গোপালভোগ,লেংরা সব জাতের আমের ফলই এবছর বেশ ভাল হয়েছে। এক কথায় বাম্পার ফলন। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, আসাদ গাজী আর তাঁর সহধর্মিণী সুফিয়া বেগম শ্রমিকদের নিয়ে গাছ থেকে আম পারছেন। ফলের ভারে নুয়ে পড়া গাছ থেকে তাঁদের আম পারার আনন্দকে তখন কাঠফাটা রোদের প্রচ- তাপও ম্লান করতে পারেনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ৭০ বছর বয়সী আসাদ গাজী বলেন, ‘আমার দুই পুত্র ও এক কন্যার মত বাগানের প্রতিটি আম গাছও সন্তানের মত। এগুলোকে লালন পালন করে বড় করে তোলার পর এখন আমাকে ফল দিচ্ছে।’ এবছর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। প্রতিটি আম্রপালি গাছে গড়ে ৬০কেজির মত আম ধরেছে। অন্যান্য জাতের আমের ফলনও প্রায় সমান। এরইমধ্যে রুপালি ও আম্রপালি তোলা শুরু হয়েছে। খুচরা ৫০-৬০ টাকা এবং পাইকারি ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছেন। আসাদ গাজী বলেন, এবছর ১৫-২০ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন। খাগড়াছড়ির স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হলেও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাঁর বাগানের সিংহভাগ আম কিনে নিয়ে যায়। আসাদ গাজী বলেন, তিনি তাঁর বাগানের আমে ফরমালিন বা কোন বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেন না। বিষমুক্ত হওয়ায় তাঁর বাগানের আমের চাহিদাও সকলের কাছে বেশি। চট্টগ্রামের আমের আরতদার ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আম্রপালি ও রুপালি আম অত্যন্ত মিস্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা আছে। তাই তাঁরা আসাদ গাজীর বাগান থেকে প্রতি বছরই আম কিনে নিয়ে যান। আসাদ গাজী বলেন, গত কয়েক বছরে রামগড় ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রচুর আমের বাগান হয়েছে। এখানে ফলনও বেশ ভাল হচ্ছে। কিন্তু হিমাগার না থাকায় চাষীরা বাধ্য হয়ে কম দামেও অনেক সময় ফল বিক্রি করতে হয়। এছাড়া ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিশেষ করে জুস তৈরির কারখানা স্থাপিত হলে চাষীরা ন্যায্য দাম পেতো এবং আরো অনেকে এ ধরণের বাগান করতো। এ ব্যাপারে পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান।
Comments
- No comments found
Leave your comments