নতুন মুকুলের গন্ধে স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁর আম চাষিরা

ঠাঠা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। ফাল্গুনের শুরুতেই চারিদিকে আমের মুকুলের গন্ধে বাতাস সুরভিত হয়ে উঠেছে, বাতাসে এখন ম-ম গন্ধ। যেদিকে দৃষ্টি যায় গাছে গাছে মুকুল আর মুকুল। বাগানে বাগানে হলুদ-সবুজের সমারোহ। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে আমের শাখা। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে সোনালি স্বপ্নে ভাসছেন আম চাষিরা।
বাগানের সারি সারি গাছে সুরভিত মুকুলের গন্ধ পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের বাতাস। আর আম গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন এ অঞ্চলের আম চাষীরা। এ জেলায় প্রতি বছর এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। মাটি বৈশিষ্ট্যগত (এঁটেল মাটি) হওয়ার কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ এলাকার আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আম উৎপাদনের বৃহৎ এই জেলায় কোন প্রকার আম গবেষণা কেন্দ্র এবং আম সংরক্ষণাগার না থাকায় নায্য মূল্য পাচ্ছেন না আম চাষিরা। আম চাষিদের দাবী জেলায় গবেষণা কেন্দ্র এবং আম সংরক্ষণাগার স্থাপনের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, বদলগাছী, পতœীতলা, মান্দা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর ঠাঠা বরেন্দ্রভ‚মি হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে জমি পতিত থাকে। বর্ষ মৌসুমে ঠাঠা এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে শুধু মাত্র আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। ধানের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ হওয়ায় নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে ঠাঠা বরেন্দ্রভ‚মির এ সব অঞ্চলে দিনদিন শতশত বিঘা জমিতে উন্নত (হাইব্রিড) জাতের আম বাগান গড়ে উঠছে।
গত পাঁচ/ছয় বছর আগে জেলায় মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হতো। গত বছর ১২হাজার ৬’শ ৭০হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়। এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
জেলার একাধিক বাগান মালিকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মাঘের প্রথম সপ্তাহ থেকে আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন বাগানের সব গাছ মুকুলে ভরে গেছে। এর মধ্যে অনেক গাছেই আমের গুটি আসা শুরু হয়েছে। এসব বাগানে তারা , গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষিরসাপাতি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙাসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতের আম গাছ লাগিয়েছেন। মুকুল আসার পর থেকেই গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন তারা। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে মুকুল রক্ষার জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ওষুধ স্প্রে করছেন।
বাগান মালিকেরা আরও জানান, আবহাওয়া এখনও অনুক‚লে রয়েছে। গত কয়েকদিন আগের বৃষ্টিপাত ও হালকা বাতাসে মুকুলের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং উপকার হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে মুকুল আরও শক্ত হয়েছে। আবহাওয়া এরকম থাকলে ফলন বাম্পার হবে বলেও আশা করছেন বাগান মালিকেরা।
সাপাহার উপজেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম জানান, আম বাগানে বছরে ৯/১০বার কীটনাশক স্প্রে করা লাগে। আম চাষ লাভজনক পেশা, খরচ খুবই সিমীত। জেলার মধ্যে বিশেষ করে সাপাহার ও পোরশা অঞ্চলের মাটি এঁটেল হওয়ায় আম অনেক সুস্বাদু একারনে সারাদেশে পোরশা ও সাপাহারের আমের চাহিদাও বেশি। এ অঞ্চলের আম রাজধানীসহ সারাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
এছাড়া কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই আম বাজারজাত করা হয়ে থাকে এমনটি জানালেন এ অঞ্চলের আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার মল্লিক জানান, জেলায় প্রতি বছর শতশত টন আম উৎপাদন হলেও পাইকারি বাজার না থাকায় আম কম মূল্যে বিক্রি করে দেন চাষিরা।
গত পাঁচ/ছয় বছর আগে জেলা মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হতো। আম চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে সব সময় পরামর্শ দেয়ায় চলতি বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার হেক্টররেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আগামী বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ অঞ্চল থেকে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।
Comments
- No comments found
Leave your comments