আমের বাহারি নামকরন
বাংলাদেশে হাজার হাজার জাতের আম গাছ থাকলেও এর কোনো নামকরণ হয়নি। কেবল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত জাতগুলোর সুন্দর সুন্দর নাম দেওয়া হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক জাতের মধ্যে কয়েকটির নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত আছে। যেমনÑ বিহারে এক ল্যাংড়া ফকিরের বাড়ি থেকে উন্নতমানের যে আম গাছের চারা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাই পরবর্তীতে ল্যাংড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। খিরসার মতো সুস্বাদু হওয়ায় এই জাতের আমের নাম হয়েছে খিরসাপাত। সবচেয়ে নাবি জাতটি আশ্বিন মাস পর্যন্ত গাছে থাকতে পারে বলে তাকে আশ্বিনা নাম দেওয়া হয়েছে। লতা বোম্বাই জাতের গাছটি চারা অবস্থায় লতার মতো বিস্তৃত হওয়ায় এটাকে লতা বোম্বাই বলা হয়। কথিত আছে, অনেক সময় এমনও হয়েছে, রানী একটি গাছের আম খুবই পছন্দ করেছেন অমনি সেই জাতের আমের নাম হয়ে গেল রানী পছন্দ। রাজা যেটি পছন্দ করেন সেটা হয়েছে রাজা পছন্দ, নায়েব পছন্দ করলে এক রকম নাম, আবার অন্য কেউ পছন্দ করলে সেই নামেই আমের নামটি প্রচলিত হয়ে গেছে। আবার খেজুরের কাঁদির মতো থোকায় থোকায় আম ধরে বলে সেই আমের নাম হয়েছে খেজুর কাঁন্দ।
এছাড়া ফজলি আম নিয়েও একটা গল্প প্রচলিত আছে।
হেরিটেজ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মাহবুব সিদ্দিকীর আম বিষয়ক একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, ব্রিটিশ ভারতে মালদহ জেলার কালেক্টর রাজভেনশ ‘ফজলি’ নামকরণ করেন। এর আগে ফজলি আম ‘ফকিরভোগ’ বলে পরিচিত ছিল। কথিত আছে, ফজলি বিবি নামে এক বৃদ্ধার বাড়ি থেকে প্রথম এই জাতটি সংগৃহীত হয়েছিল। তিনি বাস করতেন বাংলার স্বাধীন সুলতানদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের একটি প্রাচীন কুঠিতে। তার বাড়ির আঙিনায় ছিল একটি পুরনো আমগাছ। তবে এটি কোন জাতের, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না তার। ফজলি বিবি গাছটির খুব যতœ নিতেন। গাছটিতে প্রচুর আম ধরত। আমগুলো যেমন আকারে বড়, তেমনি সুস্বাদু। সেখানকার নির্জনবাসী ফকির-সন্ন্যাসীদের তিনি এই আম দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সে জন্য ফজলি বিবি এই আমের নাম দিয়েছিলেন ফকিরভোগ।
তৎকালীন কালেক্টর একবার অবকাশ যাপনের জন্য ফজলি বিবির কুঠির কাছে শিবির স্থাপন করেছিলেন। তিনি আসার খবর পেয়ে ফজলি বিবি ফকিরভোগ আম নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। ব্রিটিশ সাহেব সেই আম খেয়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। ফজলি বিবির আতিথেয়তায় তিনি এতই খুশি হয়েছিলেন যে, ওই আমের তিনি নাম দেন ‘ফজলি’। তখন থেকে এই নাম মানুষের মুখে মুখে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া বাংলাদেশে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতগুলোর সুন্দর সুন্দর নাম দেন গবেষকরা। আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী মুক্তায়িত জাতের নাম না দিয়ে একটি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যেমনÑ বারি আম-১. ২. ৩ ইত্যাদি।
Comments
- No comments found
Leave your comments