এ বার সাত সমুদ্র পাড়ি দেবে বাংলার হিমসাগর
এ বার সাত সমুদ্র পাড়ি দেবে বাংলার পরিচিত আম হিমসাগর। অর্থাৎ বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির কাছে প্রজাতি হিসাবে হিমসাগর গ্রহণযোগ্য রফতানিকারক পণ্য হিসাবে গণ্য হয়েছে। তবে সেখানে কতগুলি প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। ডাবলুটিও বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের চুক্তি মেনে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং এবং রফতানির ব্যবস্থা — এই সবটাই করতে হবে। তা না হলে সেই আম রফতানিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। তাই ভারত সরকারের অ্যাপেডা অর্থাৎ বাণিজ্য ও শিল্প দফতরের অধীনস্থ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথারিটি এবং ইউএসডিএ অর্থাৎ ইউনাইটেড স্টেটস এগ্রিকালচারাল ডিপার্টমেন্ট হিমসাগর আমকে রফতানিযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করলেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাগান মালিকদের এবং পরবর্তীকালে রফতানির সময় ব্যবসায়ীদের কতকগুলি কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা না হলে সেই আম আদৌ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। অতি সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপে বাংলার হিমসাগর ও অন্ধ্রপ্রদেশের বাংগানাপল্লি আম গ্রহণযোগ্য হয়েছে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় রফতানিযোগ্য বলে গ্রহণযোগ্য হয়েছে গুজরাতের বিখ্যাত কেশর প্রজাতির আম।
দেশের কোন কোন আম এখন রফতানি করা হয় তা পরিমাণ অনুযায়ী ক্রমপরম্পরায় দেখে নেওয়া যাক। ১) মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি এলাকার বিখ্যাত আলফান্সো, ২) কর্নাটকের বাদামি, ৩) উত্তর ভারতের চৌসা, ৪) উত্তরপ্রদেশের মালিহাবাদের দশেরি, ৫) উত্তর ভারতের ল্যাংড়া, ৬) তামিলনাড়ুর মূলগোড়া, ৭)দক্ষিণ ভারতের নীলম, ৮) গুজরাতের কেশর, ৯) কর্নাটকের রসপুরি, ১০) দক্ষিণ ভারতের তোতাপুরী, ১১)পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার হিমসাগর ও ১২) অন্ধ্রের বাংগানাপল্লি।
এ বার দেখা যাক কোন কোন নিয়মের মধ্যে দিয়ে গেলে তবে রফতানি করা যাবে।
প্রথমে বাগানগুলিকে ডাবলুটিও এসপিএস চুক্তি অর্থাৎ এগ্রিমেন্ট অন অ্যাপ্লিকেশন অফ স্যানিটারি অ্যান্ড ফাইটোস্যানিটারি মেজার্সের নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপেডা ও কৃষি মন্ত্রকের ডাইরেক্টরেট অফ প্লান্ট প্রোটেকশন কোয়ারান্টাইন অ্যান্ড স্টোরেজ-ফরিদাবাদে নথিভুক্ত করতে হবে। উৎপাদন শুরু হওয়ার অন্তত ৩০ দিন আগে নথিভুক্ত হওয়া দরকার। রোমের আন্তজার্তিক উদ্ভিদ সংরক্ষণ কনভেনশন অনুযায়ী জাতীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ সংস্থা বা এনপিপিও এর পর বাগান পরিদর্শনে আসবে। অমেরিকায় আম রফতানি করতে গেলে ফলের মধ্যে অন্তত ৪০০ গ্রে অ্যাবসর্বড ডোসেজ থাকা দরকার (খাদ্যগুণের পরিমাপ)। এ ছাড়া যথাযথ ভাবে ফাঙ্গাসমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিয়ম অনুযায়ী টিপোল, স্যান্ডোভিট প্রভৃতি ওষুধ প্রতি লিটার জলে ১ মিলি ঢেলে আমগুলি ধুয়ে ফাঙ্গাসমুক্ত করতে হবে। অন্যান্য ধরনের জীবাণুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ৫২ ডিগ্রি গরম জলে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে ৩-৪ মিনিট ধুতে হবে। এর পর যথাযথ ভাবে গুদামজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে। রফতানির করার সময় নির্দিষ্ট মাপের বাক্সে তা ভরতে হবে। প্রতিটি বাক্স থেকে আম তুলে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থাও করতে হবে। এত রকমের বাধা পেরিয়ে তবেই আম রফতানিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
রাজ্য সরকারের হর্টিকালচার বিভাগ বলছে, হিমসাগর আম সহজেই গুণমান পেরোবে। তবে বাগান মালিকদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাঁরা যদি বিন্দুমাত্র ভুলচুক করেন তা হলে গোটা প্রজাতির আমই হয়তো রফতানির অযোগ্য বলে ঘোষিত হবে।
Comments
- No comments found
Leave your comments