কালবৈশাখী ঝড়ে আম-লিচু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
ঢাকা: কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঝরে পড়ছে ফলফলাদি। নুয়ে পড়ছে ফসল। উপড়ে পড়ছে গাছপালা। আর লণ্ডভণ্ড হচ্ছে ঘর-বাড়ি। এ নিয়ে থাকছে নিউজজির ডেস্ক রিপোর্ট-
ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে নাটোরে আম, লিচু ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুরো আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। হতে থাকে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি।
স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের সময় মহাসড়ক ও সড়কে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। বজ্রপাতসহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম-লিচু পড়ে যায়। এছাড়া চলনবিল ও হালতিবিলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কলা, ভুট্টাসহ অন্যান্য কৃষি ফসলের ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, ঝড়ে পাকা ও আধ পাকা বোরো ধান গাছ পড়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন সময় লাগবে। কাটার শুরুতেই আবহাওয়া ধানের অনুকূলে থাকলেও বর্তমানে তা ধান কাটার প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় কৃষক তাদের ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
এর মধ্যে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে গেছে ইরি-বোরো ধান। পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের সোনালি পাকা ধানের স্বপ্ন। দফায় দফায় ঝড়, বৃষ্টি আর শিলা বৃষ্টির কারণে পড়ে গেছে মাঠের আধা-পাকা ধান। এই পড়ে যাওয়া ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। শ্রমিক পাওয়া গেলেও কৃষকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্য। ঝড়ে ধান পড়ে যাওয়ার কারণে বিঘা প্রতি ৪-৫ মণ হারে ধানের ফলন কম হবে বলে আশংকা করছেন এলাকার কৃষকরা।
জানা গেছে, আগের বছরগুলোতে এই সময় দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ, চিলাহাটি, ডোমারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকরা এই এলাকাগুলোতে আসে। কিন্তু দেশের সেই সব এলাকাগুলোতেও ধান চাষ শুরু হওয়ায় শ্রমিকরা এখন আর তেমন আমাদের এই একালাগুলোতে আসে না। তাই প্রতি বছর ধান চাষিতে চরম শ্রমিক সংকটে পড়তে হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ৮টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৪ শ ২৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে চারা লাগানো, নিবিড় পরিচর্যা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ দেওয়া, সার সংকট না থাকায় উপজেলার কৃষকরা জিরাশাইল, খাটো-১০, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। নতুন ধান কাটার শুরুতেই বিঘা প্রতি ২০-২২ মন হারে ধান উৎপাদন হচ্ছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল জলিল জানান, আমি এবছর ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ যথা সময়ে ভাল পরিচর্যা করায় আমার জমিতে ধান ভাল হয়েছে। ইতিমধ্যেই ধান কাটা শুরু করেছি ফলন ভালই হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা একটাই ধান কাটার শ্রমিক সংকট। দিন যাচ্ছে আর এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। ধান কাটার সময় এলেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়।
উপজেলার আবাদপুকুর হাটের ধান ব্যবসায়ী মো. বছির আলী মিঠু জানান, রোববার হাটে তেমন ধান আমদানি শুরু হয়নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান কাটতে পারছেন না। যার কারণে হাটে ধানের আমদানি নেই বললেই চলে। তবে টুকটাক বেচা-কেনা হয়েছে, জিরা জাতের ধান প্রতিমণ মনে ৮ শ ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়েছে। আশা করছি দুই চার দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান আমদানি শুরু হবে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, ইরি-বোরো ধান লাগানোর শুরু থেকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি আর শিলা বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হবে। জমিতে পড়ে যাওয়া ধানের ফলনে কিছুটা বিপর্যয় হতে পারে। পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া ভালো থাকলে ও বাজারে ধানের ভাল দাম বর্তমান থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
এদিকে, জেলার আত্রাইয়েও কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে নওগাঁর আত্রাইয়ে আম, লিচু ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুরো আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে পুরো এলাকায় অন্ধকার হয়ে শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এর সঙ্গে বজ্রপাত ও হয়।
বৃষ্টিতে ধান, পোটল, করলা, আম, লিচু, কলা, কাঁচা মরিচসহ বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই শিলা বৃষ্টির ফলে ইরি ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আত্রাই উপজেলারশাহাগোলা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সিরাজুল ইসলাম জনান, এই বৃষ্টির ফলে এলাকার ভবানীপুর, রসুলপুর, জাতোপাড়া, কয়সা, শাহাগোলা, ডাঙ্গা, তারাটিয়াসহ শ্রীরামপুর এলাকার শত শত একর জমির ধান মাটিতে লুটে পড়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, ঝড়ের সময় সড়ক ও সড়কে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। বজ্রপাতসহ ঝড় ও বৃষ্টিতে আম-লিচু পড়ে যায়। এছাড়া মাঠে বোরো ধান ঝড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কলা, ভুট্টাসহ অন্যান্য কৃষি ফসলের ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, ঝড়ে পাকা ও আধ পাকা বোরো ধান গাছ পড়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমান এখনও নির্ণয় করা যায়নি। সংশিষ্ট ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সোমবার সকালে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম ও পাকা ইরি-বেরো ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ সোমবার বিকেল পর্যন্ত ক্ষতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব জানাতে পারেনি।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ও আবু আহসান জানান, ঝড়ে আম ঝরে আমের কিছু ক্ষতি হয়েছে। পাকা ও প্রায় পাকা ধান গাছ পড়ে গেছে। গাছের গোড়ায় পানি জমেছে। তবে এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির পর শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় ঘন্টাব্যাপী ঝড়, ঝোড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও বৃষ্টি হয় জেলায়। এতে জেলার বিদ্যূৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। উপড়ে যায় গাছপালা, ভেঙ্গে যায় কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি। জমির ধান পড়ে যায়। ঝরে যায় প্রচুর আম।
৩৬ ঘণ্টা ব্যবধানে সোমবার সকালেও ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রায় একই রকম ঝড়বৃষ্টি আঘাত হানে জেলায়। তবে সোমবার ঝড়ের তীব্রতা ছিল কম আর বৃষ্টির পরিমাণ ছিল বেশি। এতে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের গোহালবাড়ির বাসিন্দা মামলুত হোসেন (৭০) শিলাবৃষ্টির কথা জানান।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান জানান, প্রচণ্ড ঝড়ে প্রচুর আম ঝরে গেছে, আম গাছের ডাল ভেঙ্গেছে। পাকা ধান নুইয়ে পড়েছে।
সোমবার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েল শিলাবৃষ্টিতে আম ও ধানের ক্ষতির কথা জানান। জানা গেছে দুদিনে মূলত জেল সদর, সদর উপজেলার মহারাজপুর, গোবরাতলা, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুর, কানসাট, উজিরপুর, চককির্তি, দাইপুকুরিয়া ও গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি।
Comments
- No comments found
Leave your comments