আম বাগানে ‘কালটার’ আতঙ্ক
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার আম বাগানগুলোতে যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ ‘কালটার’। এ কারণে আম বাগানগুলো ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সম্প্রতি পাঠানো এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার আম চাষের ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সম্প্রতি একটি নতুন হুমকি দেখা দিয়েছে। বেপারীরা অগ্রিম ও অধিক পরিমাণে আম উৎপাদনের জন্য আম গাছে ‘কালটার’ নামক রাসায়নিক প্রয়োগ করছে। এতে আম বাগানের মালিকগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জের ৫০%, সদরের ২০-২৫%, গোমস্তাপুরের ৩০%, ভোলারহাটের ২০-২৫% এবং নাচোলের ১০-১৫% আম বাগানে বর্তমানে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ সাল থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার আম বাগানগুলোতে ‘কালটার’ ব্যবহার শুরু হয়। ওই বছরই কালটারের ব্যবহার সম্পর্কে বাগান মালিকরা জানতে পারেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কালটার ব্যবহার করার কারণে প্রথম দুই থেকে তিন বছর আম বাগানগুলোতে ব্যাপক হারে আমের উৎপাদন হয়। পরে উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে মারা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার আম বাগানগুলোতে কালটারের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে আম বাগান ক্রেতা/ বেপারীরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে আম বাগানের মালিকদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘কালটার’ ব্যবহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ নয়। ওই সব দেশে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা মানা হয়। এ কারণে বাংলাদেশে কালটার-এর ব্যবহার বিধি ও মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ‘কালটার’ এর প্রয়োগ এখনও পর্যন্ত অনুমোদিত নয়। এ কারণে কালটারের ব্যবহার রোধে চাঁপাই নবাবগঞ্জ আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জেলা প্রশাসন, কৃষি ও তথ্য অফিসগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় ‘কালটার’ সরবরাহ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা (বন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইনে) নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া যায়। ওই জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে যাতে বাংলাদেশে সহজেই ‘কালটার’ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ সচেতন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়ার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, বিজিবি মহাপরিচালক এবং রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
Comments
- No comments found
Leave your comments